নভেম্বর ৬, ২০২০
ঘাসের ডগায় শিশির কণা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা
মাজহারুল ইসলাম : হেমন্ত কালের মধ্যভাগে উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘাসের ডগায় মুক্তার দানার মত শিশির কণা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সেই সাথে শীতকালে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ব্যাপক হারে বাড়তে পারে বলেও ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা শহরের দালান কোঠায় শীতের উষ্ণতা একটু দেরিতে আসলেও সাতক্ষীরার গ্রামীণ জনপদে আগে থেকেই শীতের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। গত দু’দিন সাতক্ষীরায় রোদের তীব্রতাও কমতে শুরু করেছে। তবে সারাদিনের আবহাওয়ায় একটু আধ-টু গরম অনুভূত হলেও বিকাল গড়াতেই বোঝা যাচ্ছে শীতল পরিবেশ। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে পৌষ-মাঘ দুই মাস মিলে শীতকাল। এখন বাংলা সনের কার্তিক মাসের শেষ ভাগ। আর কয়েক দিন পরেই শীতের পরশ নিয়ে হাজির হবে পৌষ মাস। আর পৌষের আগে প্রকৃতি এভাবে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। ইতিমধ্যে জেলা শহরসহ উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে লেপ-তোশক তৈরির কারিগরদের। এছাড়া গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে গৃহস্থের চাহিদা অনুযায়ী লেপ ও তোশক বানানোর কাজ করছেন মৌসুমী এসব কারিগররা। বর্তমানে একটি লেপ বানাতে খরচ নেয়া হচ্ছে ১২শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে তুলা আর কাপড়ের গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে লেপ তোশকের দাম নির্ধারণ করেন তারা। লেপ-তোশক তৈরির কারিগররা জানান, ‘কাপড় ও তুলার দাম বেশি হওয়ায় খরচ আগের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এটি একটি মৌসুমী ব্যবসা। সারা বছর অলস সময় কাটানোর পর শীতের কয়েক মাস কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধির সাথে সাথে দিন রাত পরিশ্রম করে অতিরিক্ত উপার্জন নিজেদের স্বচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করি’। তারা আরও জানান, ‘শীতের প্রকট যত বেশি হয়, কাজও ততো বেশি বেড়ে যায়’। এদিকে শীতের আগমনী বার্তায় আমন ধান ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার চাষিরা। সেই খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেছেন গাছিরা। শীতের সকালে খেজুর রসের গুড়, পায়েস আর আমনের পিঠাপুলির উৎসবের আয়োজনে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে গৃহবধূরা। শীত মানে অনেকের কাছে আনন্দের। আর কারও কাছে যন্ত্রণার। তবে বেশিরভাগ মানুষ শীত মৌসুমকেই পছন্দের সময় হিসেবে গণ্য করেন। শীতের সময় ভ্রমণ প্রেমীরা বিভিন্ন জেলার পর্যটন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে থাকেন। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবনসহ জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্রগুলো। জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘শীতকালে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে বলে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সূর্যের রশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। ফলে কমতে থাকে তাপমাত্রা। আর এতেই অনুভূত হয় শীত। সে হিসেবে পুরোপুরিভাবে শীত আশার এখনও কয়েকদিন বাকি রয়েছে’। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিসার ইনচার্জ মো. জুলফিকার আলী রিপন জানান, ‘বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) সাতক্ষীরায় সর্বোচ্চ তাপমাত্র ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস’। তিনি আরও জানান, ‘স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে আসলে ঠান্ডা অনুভূত হয়। এখন থেকে ক্রমেই তাপমাত্রা কমতে থাকবে’। এদিকে শীতের আগমনে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে বেশিরভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। করোনা মহামারির মধ্যে সর্দি-জ্বরকে স্বাভাবিকভাবে নিতেও সাহস পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়েত জানান, ‘যেহেতু ঠান্ডায় করোনার প্রকোপটা বেড়ে যায়, সেহেতু শীতকাল আমাদের জন্য হুমকি বলতে পারি’। তিনি আরও জানান, আসন্ন শীতকালে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সকল প্রতিরক্ষা মূলক প্রস্ততি আমরা নিয়েছি। এ বিষয়ে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা মূলক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি সাতক্ষীরাবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও করোনা প্রতিরোধে সকল ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাচল করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহŸান করেন তিনি’। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘শীতকাল কাটিয়ে উঠতে পারলে ইনশাআল্লাহ আগামী মার্চ মাসেই পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক স্থানে ফিরে আসবে’। 8,425,619 total views, 9,392 views today |
|
|
|